কোষ (জীববিজ্ঞান)
কোষ (জীববিজ্ঞান)
কোষ | |
---|---|
![]()
Onion (Allium) cells in different phases of the cell cycle
| |
![]()
A eukaryotic cell (left) and a prokaryotic cell (right)
| |
শনাক্তকারী | |
টিএইচ | এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত বিরামচিহ্ন ক্যারেক্টার "�".html H1.00.01.0.00001 |
এফএমএ | FMA:68646 |
অ্যানাটমিকল পরিভাষা |
কোষ(ইংরেজি: Cell) হল সকল জীবের গাঠনিক এবং কার্যকরি একক। এটি জীবের ক্ষুদ্রতম একক জীবিত একক, অর্থাৎ একটি কোষকে পৃথকভাবে জীবিত বলা যেতে পারে। এজন্যই একে জীবের নির্মাণ একক নামে আখ্যায়িত করা হয়।[১]) ব্যাক্টেরিয়া এবং এ ধরনের কিছু জীব এককোষী। কিনতু মানুষ সহ পৃথিবীর অধিকাংশ জীবই বহুকোষী। (মানব দেহে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ রয়েছে; একটি কোষের আদর্শ আকার হচ্ছে ১০ মাইক্রোমিটার এবং ভর হচ্ছে ১ ন্যানোগ্রাম)। জানামতে বৃহত্তম কোষ হচ্ছে উটপাখির ডিম। চূড়ান্ত কোষ তত্ত্ব আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে ১৮৩৭ সালে চেক বিজ্ঞানী Jan Evangelista Purkyňe অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে উদ্ভিদ কোষ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে ছোট ছোট দানা লক্ষ্য করেন। ১৮৩৯ সালে বিজ্ঞানী Matthias Jakob Schleiden এবং Theodor Schwann কোষ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন এবং তাদের তত্ত্বে বলা হয়, সকল জীবিত বস্তুই এক বা একাধিক কোষ দ্বারা গঠিত এবং সব কোষই পূর্বে অস্তিত্বশীল অন্য কোন কোষ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। জীবের মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ সব ক্রিয়াই কোষের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়। সকল কোষের মধ্যে কার্যক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বংশগতীয় তথ্য এবং পরবর্তী বংশধরে স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
কোষ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ সেল (cell)। সেল শব্দটি লাতিন শব্দ সেলুলা থেকে এসেছে যার অর্থ একটি ছোট্ট কক্ষ। এই নামটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী রবার্ট হুক। ১৬৬৫ সালে তার প্রকাশিত একটি গ্রন্থে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পর্যবেক্ষণকৃত কর্ক কোষের কথা উল্লেখ করেন। এই কোষের সাথে তিনি ধর্মীয় সাধু-সন্ন্যাসীদের ঘরের তুলনা করেছিলেন। এ থেকেই জীবের ক্ষুদ্রতম গাঠনিক ও কার্যকরি এককের নাম দিয়ে দেন সেল।
নিউক্লিয়াসের ধরনের উপর ভিত্তি করে কোষ প্রধানত দুই প্রকার: আদি কোষ এবং প্রকৃত কোষ। আদি কোষ অনেকটা স্বাধীন, কিন্তু প্রকৃত কোষ বহুকোষী জীবের মধ্যে থেকে অন্যের সাথে মিলে কাজ করে।
পরিচ্ছেদসমূহ
আদি কোষ(prokaryotic cell)[সম্পাদনা]
মূল নিবন্ধ: আদি কোষ
নিউক্লিয়াসের গঠনের উপর ভিত্তি করে আদি কোষের সাথে প্রকৃত কোষের পার্থক্য করা হয়, বিশেষত নিউক্লীয় ঝিল্লি আছে কি নেই তার উপর ভিত্তি করে। প্রকৃত কোষে উপস্থিত অধিকাংশ অঙ্গাণুই আদি কোষে নেই, কেবল ব্যতিক্রম হল রাইবোজম যা উভয় ধরনের কোষেই উপস্থিত। মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরোপ্লাস্ট বা গলগি বস্তু ইত্যাদির কাজের অধিকাংশই আদি কোষের ক্ষেত্রে প্লাজমা ঝিল্লি সম্পন্ন করে। আদি কোষের মধ্যে তিনটি প্রধান ভিত্তি স্থাপনকারী অংশ রয়েছে: ১। ফ্লাজেলা এবং পিলি নামে পরিচিত উপাঙ্গ যারা কোষ তলের সাথে লেগে থাকা প্রোটিন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। ২। একটি ক্যাপসুল, একটি কোষ প্রাচীর এবং একটি কোষ তল সমৃদ্ধ কোষ এনভেলপ। এবং ৩। একটি সাইটোপ্লাজমীয় অঞ্চল যেখানে কোষ জিনোম (ডিএনএ), রাইবোজম এবং বিভিন্ন অনুপ্রবেশকারী থাকে।[২] এছাড়া এ ধরনের কোষে পরীলক্ষিত পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ:
- প্লাজমা ঝিল্লি (ফসফোলিপিড দ্বিস্তর) কোষের অভ্যন্তরভাগকে এর পরিবেশ থেকে রক্ষা করে এবং এর মধ্যে একটি যোগাযোগ মাধ্যম ও ফিল্টার হিসেবে কাজ করে।
- অধিকাংশ আদি কোষেরই একটি কোষ প্রাচীর রয়েছে; ব্যতিক্রম হল মাইকোপ্লাজমা (এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া) এবং থার্মোপ্লাজমা (একটি আর্কিয়ন)। ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রে কোষ প্রাচীরের মধ্যে পেপটিডোগ্লাইক্যান নামক পদার্থ থাকে যা বাইরের যেকোন শক্তি বিরুদ্ধে একটি বাঁধা হিসেবে কাজ করে। কোষ প্রাচীর কোষকে হাইপোটনিক পরিবেশে অসমোটিক চাপের কারণে বিস্ফোরিত হওয়া (সাইটোলাইসিস) থেকে রক্ষা করে। প্রকৃত কোষেও ক্ষেত্রবিশেষে কোষ প্রাচীর থাকতে দেখা যায় (উদ্ভিদ কোষের সেলুলোজ, ছত্রাক), কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রাচীরের রাসায়নিক গঠন ভিন্ন।
- আদি কোষের ক্রোমোসোম একটি বৃত্তাকার অণু। অবশ্য লাইম রোগ সৃষ্টিকারী Borrelia burgdorferi নামক ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটে। আদি কোষে প্রকৃত নিউক্লিয়াস না থাকলেও ডিএনএ অণু একটি নিউক্লিঅয়েডের মধ্যে ঘনীভূত থাকে। এরা প্লাজমিড নামক এক্সট্রাক্রোমোসোমাল ডিএনএ মৌল বহন করে যারা সাধারণত বৃত্তাকার। প্লাজমিড কিছু সহযোগী পদার্থ বহন করতে পারে, যেমন এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স।
প্রকৃত কোষ(eukariyotic cell)[সম্পাদনা]
মূল নিবন্ধ: প্রকৃত কোষ
প্রকৃত কোষগুলো আকারে একটি আদর্শ আদি কোষের ন্যূনতম ১০ গুণ বড় এবং এর আয়তন আদি কোষের তুলনায় সর্বোচ্চ ১০০০ গুণ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। আদি এবং প্রকৃত কোষের মধ্য মূল পার্থক্য হচ্ছে, আদি কোষের মধ্যে ঝিল্লি দ্বারা আবৃত কক্ষ থাকে যার মধ্যে নির্দিষ্ট বিপাকীয় কার্যাবলী সম্পাদিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কোষ নিউক্লিয়াস যার মধ্যে প্রকৃত কোষের ডিএনএ অবস্থান করে। নিউক্লিয়াস একটি ঝিল্লি দ্বারা বেষ্টিত কক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এই নিউক্লিয়াসের কারণেই প্রকৃত কোষ তার ইংরেজি নামটি পেয়েছে। ইরেজি নাম "ইউক্যারিয়টিক"-এর অর্থ "প্রকৃত নিউক্লিয়াস"। অন্যান্য পার্থক্যের মধ্যে রয়েছে:
- প্লাজমা ঝিল্লি অনেকটা আদি কোষের মতই, তবে কার্যাবলী এবং গঠনে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। কোষ প্রাচীর থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।
- প্রকৃত কোষের ডিএনএ এক বা একাধিক রৈখিক অণুতে বিন্যস্ত থাকে যাদেরকে ক্রোমোসোম বলা হয়। ক্রোমোসোম হিস্টোন প্রোটিনের সাথে সম্পর্কিত। সকল কোমোসোমাল ডিএনএ কোষের নিউক্লিয়াসে সজ্জিত থাকে যা একটি ঝিল্লির মাধ্যমে সাইটোপ্লাজম থেকে পৃথকীকৃত থাকে। প্রকৃত কোসের কিছু অঙ্গাণুরও নিজস্ব ডিএনএ রয়েছে।
- এরা সিলিয়া বা ফ্লাজেলা ব্যবহার করে চলাচল করতে পারে। এদের ফ্লাজেলা আদি কোষের তুলনায় জটিল।[৩]
আদি কোষ | প্রকৃত কোষ | |
---|---|---|
আদর্শ কোষের অংশসমূহ | ব্যাক্টেরিয়া, আর্কিয়া | প্রোটিস্ট, ছত্রাক, উদ্ভিদ, প্রাণী |
আদর্শ আকার | ~ ১-১০ মাইক্রোমিটার | ~ ১০-১০০ মাইক্রোমিটার (লেজ বাদ দিলে শুক্রাণু এর চেয়ে ছোট) |
নিউক্লিয়াসের প্রকৃতি | নিউক্লিঅয়েড অঞ্চল; কোন প্রকৃত নিউক্লিয়াস নেই | দ্বিস্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি সহ প্রকৃত নিউক্লিয়াস আছে। |
ডিএনএ | সাধারণত বৃত্তাকার | হিস্টোন প্রোটিনবিশিষ্ট রৈখিক অণু। |
আরএনএ/প্রোটিন সংশ্লেষণ | সাইটোপ্লাজমের মধ্যে সংযুক্ত | নিউক্লিয়াসের ভিতরে আরএনএ সংশ্লেষ ঘটে। সাইটোপ্লাজমে প্রোটিন সংশ্লেষ ঘটে। |
রাইবোজোম | ৫০এস+৩০এস | ৬০এস+৪০এস |
সাইটোপ্লাজমীয় গঠন | খুব অল্প সংখ্যাক গঠন | অন্তঃঝিল্লি এবং সাইটোকঙ্কাল দ্বারা ভালোভাবে গঠিত |
কোষের চলাচল | ফ্লাজেলিন দ্বারা গঠিত ফ্লাজেলা | টিউবিউলিন এবং ল্যামেলিপোডিয়া দ্বারা গঠিত ফ্লাজেলা ও সিলিয়া। |
মাইটোকন্ড্রিয়া | নেই | এক থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। কয়েকটির অবশ্য একেবারেই থাকেনা। |
ক্লোরোপ্লাস্ট | নেই | শৈবাল এবং উদ্ভিদ-এ থাকে। |
সংগঠন | সাধারণত একক কোষ | একক কোষ, কলোনি, বিশেষ কোষ দ্বারা গঠিত উচ্চতর বহুকোষী জীব |
কোষ বিভাজন | দ্বি-বিভাজন (সাধারণ বিভাজন) | মাইটোসিস (বিভাজন বা বাডিং) মিয়োসিস |
আদর্শ প্রাণী কোষ | আদর্শ উদ্ভিদ কোষ | |
---|---|---|
অঙ্গাণু |
|
|
সহযোগী গঠনসমূহ |
|
কোষের উপাদানসমূহ[সম্পাদনা]
আদি বা প্রকৃত সকল কোষেই একটি আবরণ থাকে যার মাধ্যমে এটি বাইরের পরিবেশ থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং এই আবরণটি কোষের বাইরের পদার্থের সাথে ভিতরের পদার্থের আদান প্রদানের ভারসাম্য রক্ষা করে। এছাড়াও এই আবরণটির মাধ্যমে কোষের তড়িৎ বিভব বজায় থাকে। ঝিল্লি বা আবরণটির ভিতরে একটি লবণাক্ত সাইটোপ্লাজম অদিকাংশ আয়তন দখল করে থাকে। সকল কোষেই জিনের বংশগতিক পদার্থগুলো বহনের জন্য ডিএনএ এবং এনজাইমসহ অন্যান্য প্রোটিন সংশ্লেষের জন্য আরএনএ উপস্থিত থাকে। এ দুটিই কোষের প্রাথমিক যন্ত্রপাতি। এছাড়াও কোষে অন্যান্য ধরনের জৈব অণু থাকে। এখানে এই উপাদানগুলোর তালিকা তৈরি করা হবে।[৪]
কোষ গবেষণার ইতিহাস[সম্পাদনা]
- ১৬৩২ - ১৭২৩ : Anton van Leeuwenhoek নিজে নিজে লেন্স ঘষে নির্দিষ্ট আকারে আনতে শিখেন, তৈরি করেন অণুবীক্ষণ যন্ত্র। এর মাধ্যমে বৃষ্টির পানিতে ভোর্টিসেলা এবং এরকম কিছু প্রোটোজোয়া আবিষ্কার করেন। এছাড়া নিজের মুখে ব্যাক্টেরিয়া আবিষ্কার করেন।
- ১৬৬৫ : আদি প্রকৃতির একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে রবার্ট হুক প্রথমে কর্ক কোষ আবিষ্কার করেন এবং পরে আরও কিছু জীবন্ত উদ্ভিদ কোষ আবিষ্কার করেন।[৫]
- ১৮৩৯ : জার্মান জীববিজ্ঞানী থিওডোর সোয়ান এবং মাথিয়াস জ্যাকব শ্লেইডেন সকল প্রাণী এবং উদ্ভিদ কোষ দ্বারা গঠিত বলে একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন। তারা বলেন কোষ হল গঠন এবং উন্নয়নের একক। এভাবেই কোষ তত্ত্বের জন্ম হয়।
- লুই পাস্তুর (১৮২২ - ১৮৯৫) মত প্রকাশ করেন যে, জীবন স্বতঃস্ফূর্তভাবে গঠিত হতে পারে। এই তত্ত্বকে generatio spontanea বলে। অবশ্য ১৬৬৮ সালে ফ্রানসেস্কো রেডি একটি পরীক্ষা করেছিলেন যা থেকে একই তত্ত্ব প্রমাণিত হয়।
- Rudolph Virchow বলেন, কোষ সব সময়ই কোষ বিভাজনের মাধ্যমে উৎপত্তি লাভ করে। (omnis cellula ex cellula)
- ১৯৩১ : জেমস ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে সর্বপ্রথম ডিএনএ অণুর দ্বি-হেলিক্স গঠন আবিষ্কার করেন।
- ১৯৮১ : লিন মার্গুলিস Symbiosis in Cell Evolution নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এই বইয়ে এন্ডোসিমবায়োটিক তত্ত্বের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।
No comments